সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি:
নিয়োগ বিধিমালা অমান্য করে তথ্য গোপন রেখে পুলিশের (নিরস্ত্র) সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে চাকরিতে যোগ দেন সিলেট রেঞ্জের কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম।
এ নিয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৬ আগস্ট একাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘তথ্য গোপন করে এসআই পদে চাকরি : সুবিধা নিয়ে রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর নড়েচড়ে বসে পুলিশ বিভাগ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পেয়ে সাইফুলকে সারদা পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারকে।
চলতি বছরের ১১ অক্টোবর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার (বেসিক ট্রেনিং) এক ফ্যাক্স বার্তায় এ নির্দেশনা দেন।
অপর এক নির্দেশে তথ্য গোপন রেখে সাইফুলকে ‘অবিবাহিত’ বলে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট (ভিআর) দেয়া তদন্ত কর্মকর্তা তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধরের কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত সংম্লিষ্ট অন্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেডকোয়াটার্সের এআইজি (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্লানিং-১) তামান্না ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজিকে এ নির্দেশ দেন।
পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশনার এক মাসেও বহাল তবিয়তে আছেন তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, যেহেতু পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে চিঠি পাঠিয়েছে, সম্ভবত ব্যবস্থা নেয়া হয়ে গেছে এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের চিঠি ও সারদার ফ্যাক্স বার্তা পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান জানান, দুটি বিষয়ই সিনিয়র অফিসাররা তদন্ত করছেন। আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী সময়মতো রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব হেডকোয়ার্টার্সে। এর আগে এলাকাবাসীর পক্ষে পুলিশের আইজিপি বরাবরে দুটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগের কপিগুলো গণমাধ্যমের হাতে পৌঁছলে অনুসন্ধানে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। সুবিধা নিয়ে তথ্য গোপন রেখে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট (ভিআর) দেন তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর। ওসি নন্দনের দেয়া ভিআর রিপোর্ট অনুযায়ী পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি)-৭৪১ ধারা বিধি মোতাবেক চাকরি হয় সাইফুলের।
এলাকাবাসীর পক্ষে আলী হোসেনের দেয়া দুটি লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বিয়ে করার পরও অবিবাহিত বলে বাংলাদেশ পুলিশে ৩৬তম আউটসাইট ক্যাডেট এসআই (নিরস্ত্র) পদে চাকরি পেয়ে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণে যোগদান করেছে সাইফুল। শুধু তাই নয় চাকরিতে ঘুষ লাগবে বলে শ্বশুরের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা যৌতুক নেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছে।
সাইফুলকে অবিবাহিত বলে চাকরির ভেরিফিকেশন দেয়ার জন্য তার শ্বশুর আক্তার আলী ওসি নন্দনকে এক লাখ টাকা ঘুষ দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ওসি নন্দন কান্তি ধর ভেরিফিকেশন রিপোর্টের জন্য এলাকায় তদন্তে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন।
কিন্তু ওসি টাকার বিনিময়ে সাইফুলকে অবিবাহিত বলে রিপোর্ট দেন। ওসি নন্দন কান্তি ধরের বিরুদ্ধে আরও একটি তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, তদন্তে তথ্য গোপন করে সাইফুলকে অবিবাহিত বলে রিপোর্ট দেয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।
এডিশনাল এসপি দিরাই সার্কেল বেলায়েত হোসেন বুধবার বলেন, ৪ বার নোটিশ করে সাইফুলকে পাওয়া যায়নি। এখন শুনছি সারদা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।